মহসীন শেখ:
বাংলাদেশে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা খাত সাধারণত দুটি উপশাখায় বিভক্ত জনস্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা শিক্ষা। সুস্বাস্থ্য মানুষের অন্যতম প্রধান চাহিদা এবং স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ লাভ সবার মৌলিক অধিকার। সাম্প্রতিককালে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা খাতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করলেও মানবদেহে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সেবা ব্যায়বহুল হওয়ায় সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা এ লক্ষ্যে এখনও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। যেমন-দন্ত, অর্থো সার্জারী ও চক্ষু সহ বেশকিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা ব্যয় বহুল। তবে মানুষের মধ্যে ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যসচেতনার কারণে স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট শাখা গুলোতে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় মানবদেহের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ওসব চিকিৎসা সেবা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই অন্যান্য চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি মানবদেহে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ চোঁখের চিকিৎসা অত্রি মাত্রায় ব্যয়বহুল।
ফলে বাংলাদেশে অর্থাভাবে বহু মানুষ দৃষ্টি হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। একইভাবে কক্সবাজার জেলা সহ পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী অঞ্চলে বসবাসকারী সাধারণ মানুষের জন্য চক্ষু চিকিৎসা দুরহ বিষয়।
এদিকে সুবিধা বঞ্চিত সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবাকে টার্গেট করে বর্তমান সময়ে দেশের সর্বত্রে যখন ব্যবসায়ি মানসিকতায় পরিপূর্ণ ব্যয়বহুল চিকিৎসা কেন্দ্রেগুলোর দৌরাত্ম বৃদ্ধি হয়েছে মারাতœকহারে। সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোতে চক্ষু চিকিৎসা থাকলেও অর্থ ও চিকিৎসক সংকট ছাড়াও নানা কারণে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ।

ঠিক এ সময়ে স্বল্প মূল্যে সর্বাধুনিক ও যুগ-উপযোগী আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে কক্সবাজারে চক্ষু চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ২১ বছরে এ হাসপাতাল চিকিৎসা দিয়েছে ১৫ লাখ ২৫ হাজার মানুষকে। তবে পর্যাপ্ত সরকারী সুবিধা পেলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরো এগিয়ে নিতে পারবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানাযায়, দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় চেতনা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং পর্যটন এলাকা কক্সবাজারের সাধারণ মানুষের সার্বিক বিষয় চিন্তা করে আধুনিক চক্ষু চিকিৎসা সেবা তুণমুল পর্যায়ে পৌছে দিতে উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম বায়তুশ শরফ দরবারের পীর মরহুম শাহ সুফী আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার (রহ:) ১৯৯২ সালে কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৯৭ সাল থেকে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে গতকাল পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে ১৫ লাখ ২৫ হাজার মানুষকে। এর মধ্যে রয়েছে ছানি অপারেশন, ডিসিআর অপারেশন, গ্রাফটিং অপারেশন। এ ছাড়াও রয়েছে দরিদ্র রোগীকে বিনামূল্যে চশমা প্রদান, বিনামূল্যে ছানি অপারেশনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা। পাশাপাশি নতুন করে যুক্ত হয়েছে কক্সবাজারেই প্রথম ফেকু সার্জারী (যন্ত্রটি দিয়ে চোঁখে রেজার লাগানো হয়)।

কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের যুগ্নসম্পাদক ও দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম কামাল উদ্দিন জানান, এ হাসপাতালে বর্তমানে আউটডোর,ইনডোর,জরুরী বিভাগ,মাঠ পর্যায়ে চক্ষু চিকিৎসা সেবা,স্বল্প খরচে/বিনামূল্যে বিভিন্ন চক্ষু চিকিৎসা সেবা ও শিশু বিভাগ চালু রয়েছে। এসব বিভাগে সাত জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতালের অর্থ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: দেলাওয়ার হোসেন বলেন, ব্যবসায়িক মানষিকতার গন্ডি পেরিয়ে একান্তভাবে মানব সেবার মহান ব্রত নিয়ে বাংলাদেশে হাতে গোনা যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে, কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতাল তাদের মধ্যে অন্যতম।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের নীচ তলায় শতাধিক রোগী বসে আছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। পাঁচ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এসব রোগীদের পর্যায়ক্রমে চিকিৎসা চিচ্ছেন।

এসময় কথা হয় হামিদা আক্তার নামে এক রোগীর সাথে। তিনি এসেছেন রামু উপজেলার কাওয়ারখোপ ইউনিয়ন থেকে। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ এক বছর ধরে চোখ নিয়ে কষ্ট পাচ্ছি,সরকারী হাসপাতালসহ কয়েকটি বেসরকারী হাসপাতে চিকিৎসা নেয়ার পরও চোঁখ ভালো হয়নি। অথচ বায়তুশ শরফ হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর এক সপ্তাহের মধ্যে চোঁখ ভালো হয়ে গেছে।

কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এম এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল হচ্ছে আধুনিক সযোগ-সুবিধা সম্বলিত অনন্য এক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সম্পূর্ণ অলাভজনক ভাবে পরিচালিত এ হাসপাতালটি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণীর, সব পেশার, সব মানুষের প্রতিষ্ঠান। শুধু কক্সবাজার জেলার মানুষই নয়, পর্বত্য অঞ্চলের চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত উপজাতী সহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। বিশেষ করে কক্সবাজার নিজ জেলার দক্ষ চিকিৎসক ও কর্মীদেরও নিয়োগ দিয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাছাড়াও হাসপাতালটিতে বহু স্থানীয় ব্যক্তিদের চাকুরী সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি পীরে কেবলা বাহরুল উলুম শাহ সুফি আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোহাম্মদ কুতুব উদ্দীন(ম.জি.আ.) এর নির্দেশক্রমে এ হাসপাতালে চক্ষু চিকিৎসার পাশাপাশি ডায়াবেটিকস,শিশু,গায়নী,অর্থোপেডিকস ও পঙ্গুসহ মানুষের জরুরী চিকিৎসা দিতে ব্যস্থাপনা পরিষদ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে এবং এসব চিকিৎসা দ্রুত চালু করা হবে।

বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালের প্রধান সার্জন দেশের খ্যাতনামা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা: মুশফিকুর রহমান জানান, বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতালে প্রতিদিন যেসব রোগী আসেন তাদের অধিকাংশই দরিদ্র।

তিনি বলেন, এ হাসপাতালের ডাক্তারগণ শুধু হাসপাতালেই নই তারা পাহাড়ী তথা বৃহত্তর চট্রগ্রামের সুবিধা বঞ্চিত মানুষদেরও বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা দেন। এসব কারণে এ হাসপাতালের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা দিন দিন বাড়ছে।